September 14, 2025

দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ৬ দেশে ভূমিকম্প, বাংলাদেশেও কম্পন অনুভূত

Untitled design 6 1

দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও আঘাত হেনেছে ভূমিকম্প। রোববার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ভারতের আসামের ধেকিয়াজুলি থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে।

এশিয়ার এই ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে মাঝারি মাত্রার এই কম্পন বাংলাদেশসহ অন্তত ছয়টি দেশে অনুভূত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে বহুতল ভবনে থাকা মানুষজন দ্রুত খোলা জায়গায় নেমে আসেন।


কোন কোন দেশে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে?

যদিও ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের আসাম, তবে এর প্রভাব পড়েছে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে।

  • বাংলাদেশ: ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়।

  • ভারত: আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে।

  • নেপাল: সীমান্তবর্তী এলাকায় হালকা কম্পন অনুভূত হয়।

  • ভুটান: ভূমিকম্পের প্রভাবে আতঙ্কিত হয়ে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে।

  • মিয়ানমার: উত্তরাঞ্চলে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

  • তিব্বত (চীন): দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হালকা কম্পন ধরা পড়ে।

এই ছয় দেশে কমবেশি সবাই ভূমিকম্পের প্রভাব টের পেয়েছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আসামে কিছু ভবনে দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।


বাংলাদেশে পরিস্থিতি

বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। গত কয়েক দশকে বড় ধরনের ভূমিকম্প না হলেও মাঝারি মাত্রার কম্পন বারবার মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ঢাকায় বহু মানুষ কম্পন অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে আসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। কেউ কেউ জানান, প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে হালকা মাথা ঘোরা বা আসবাবপত্র নড়াচড়া করায় আতঙ্কে পড়েন।

সিলেট ও চট্টগ্রামে ভূমিকম্পের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হয়। বিশেষ করে বহুতল ভবনে বসবাসকারী মানুষরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে দেশের কোথাও গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।


ভূমিকম্প কেন হয়? – বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ভূমিকম্প মূলত পৃথিবীর ভেতরে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে ঘটে। পৃথিবীর ভূত্বক বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত, যেগুলোকে প্লেট বলা হয়। এই প্লেটগুলো যখন একে অপরের সাথে সংঘর্ষে আসে, তখন শক্তির সঞ্চয় ঘটে। সেই শক্তি হঠাৎ করে মুক্তি পেলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।

দক্ষিণ এশিয়া একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল কারণ হিমালয় পর্বতমালা তৈরি হয়েছে ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষে। এখনো এই প্লেটগুলোর চাপ অব্যাহত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ আশেপাশের দেশগুলোতে প্রায়ই ছোট-বড় ভূমিকম্প দেখা দেয়।


ইতিহাস থেকে শিক্ষা

বাংলাদেশ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে অতীতে বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে।

  • ১৮৯৭ সালের আসাম ভূমিকম্প: ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প, যার প্রভাবে সিলেটসহ পুরো উত্তর-পূর্ব ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

  • ১৯৩৪ সালের নেপাল ভূমিকম্প: এতে হাজারো মানুষ মারা যায়।

  • ২০০৪ সালের সুমাত্রা-আন্দামান ভূমিকম্প: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে ভয়াবহ সুনামি সৃষ্টি করেছিল, যার প্রভাব বাংলাদেশেও অনুভূত হয়।

এইসব ঘটনার পর থেকে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে আসছেন যে, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।


মানুষের প্রতিক্রিয়া

ভূমিকম্পের সময় মানুষের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। এবারও দেখা গেছে—

  • অনেকেই হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে ভবন ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।

  • সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভূমিকম্প নিয়ে পোস্ট শুরু হয়ে যায়।

  • ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষরাও গাড়ি দুলতে দেখে ভীত হন।

  • কেউ কেউ আবার বলছেন, বারবার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা আমাদের সচেতনতার সংকেত দিচ্ছে।


উপসংহার

রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্প হয়তো বড় কোনো ক্ষতি করেনি, তবে এটি আবারও আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে—আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছি। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্য ভূমিকম্প নতুন কিছু নয়, কিন্তু প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে ছোট ভূমিকম্পও ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার, ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়ার। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থামানো না গেলেও সঠিক পরিকল্পনা ও সতর্কতায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

Krishibid-Group-Real-Estate
© Copyright Krishibid Real Estate 2025. All Rights Reserved.
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram